“ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন!’
বিশেষ প্রতিবেদন
ঘরহীন অসহায় বাস্তহারা মানুষের জন্য বরাদ্দকৃত
আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘরেই মারা গেলেন সাবেক এমপি জজ মিয়া। উল্লেখ্য তিনি দুইবারের সংসদ সদস্য ছিলেন। এরশাদ জমানায় ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের শুধু দাপুটে এমপি’ই ছিল না, অর্থবিত্ত, প্রভাব-প্রতিপত্তি, যশ-খ্যাতি, জনপ্রিয়তা কোনকিছুরই কমতি ছিল না তাঁর। মানুষকে সহযোগিতাও করেছেন পরম উদারতায়।
অথচ আজ তিনি নিরবে চিরতরে বিদায় নিলেন।
দূর্বা থেকে শিশির ঝরার মত নিস্তব্ধে বিদায় নিলেন সাবেক এই দাপুটে সাংসদ। কেউ জানলনা। টিভি, মিডিয়ায় ঘণ্টায় ঘণ্টায় ব্রেকিং, আলোচনা নেই, পত্রিকায় নেই কোনপ্রকার শোকবার্তা! জানাজা নামাজে জমায়েত নিয়েও ফেসবুকে নেই কেন প্রচার-প্রসার। একসময় তাঁর চারপাশে প্রিয়জন, আত্মীয়স্বজন, শুভাকাঙ্ক্ষী, শুভানুধ্যায়ীর মুখর উপস্থিতি থাকলেও অন্তিম মূহুর্তে কেউ ছিলনা। শেষ বিদায়ের কালে প্রিয়জনের চোখে একফোঁটা জল দেখে তিনি শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করতে পারলেন না। কী নিরব এবং নির্মম প্রস্থান!!
শেষ কালে পাশে কেউ ছিলনা, কিছুই ছিলনা তার।
বিশ্বস্তসূত্রে জানা যায়, রোগে-শোকে কাবু একসময়ের এই প্রভাবশালী সাংসদ জজ মিয়ার তিনবেলা খাবারও জুটতনা। ছিল না মাথার উপর একটু ছাউনি। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে একসময় তাঁর জায়গা হয় আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে। সেখানেই আজ তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে পরপারে চলে গেলেন!!
জীবনে কিছুই নিজের করে রাখতে চাননি তিনি।
সব উজার করে দিয়েছেন সবাইকে। প্রথম স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে পাড়ি জমিয়েছিলেন আমেরিকায়। সঙ্গে নিয়েছিলেন অঢেল টাকা-পয়সা। স্ত্রী-সন্তানের সুখের কথা বিবেচনা করে তাদের তিনি সব দিয়েছিলেন। বিনিময়ে শেষে পেয়েছিলেন, বিবাহ বিচ্ছেদ!!
এরপর তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করেন।
একসময় দ্বিতীয় স্ত্রী নাছিমা হক, দুই কন্যা সহ বাবার কাছ থেকে আলাদা হয়ে যান। ঢাকাস্থ পুরানা পল্টন ও মিরপুর কাজী পাড়ায় বিশাল দুটি বাড়ি তাদের নামে লিখে দেন জজ মিয়া। স্থানীয়ভাবে থাকা সম্পদ বিক্রি করেও টাকা দেন তাদের।
সবশেষ নিজের সম্পত্তি বলতে ছিল ১২ শতাংশ জমি, তাও লিখে দেন মসজিদের নামে।
এরপর তিনি কেবলমাত্র টিকে থাকতে তৃতীয় বিয়ে করেন। ততদিনে তিনি নিঃস্ব, রিক্ত, একেবারেই অসহায়! ছোট্ট এক অবুঝ সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে একরুমের ভাড়া বাসায় কেটে যাচ্ছিল জীবন। হতাশাগ্রস্ত জজ মিয়া হয়তো ভুলে করে কখনো অপেক্ষায় থাকতো,,– -“কেউ যদি আসে!”
নাহ! জীবন সায়াহ্নে কেউ আসেনি। নিভু নিভু বয়ে চলা জীবনটাকে একটু উজ্জ্বল আলো দিতে ফিরে তাকায়নি সন্তানরাও ।
একসময়ের প্রভাবশালী এই সংসদ সদস্য দু’মুঠো খাবারের জন্য মানুষের কাছে হাতও পেতেছেন। বাস্তব বড়ই কঠিন!!
সাবেক সেনা কর্মকর্তা, একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ( সার্টিফিকেট নেননি) মাথা গোঁজার ঠাইয়ের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্পে জায়গা নিয়েছেন। ওষুধের টাকার জন্যেও ঘুরেছেন মানুষের দুয়ারে দুয়ারে।
সংসদ সদস্য থাকাকালীন
অজস্র মানুষকে নানাভাবে সাহায্য সহযোগিতা করেছিলেন, চাকরি দিয়েছিলেন অনেককেই। সন্তানদের অভাব বুঝতে দেননি। বিবাহ বিচ্ছেদের পরেও সন্তানদের সুখের জন্য নিজের উপার্জিত সবকিছু দিয়েছেন। কিন্তু একটিবারও তাঁর দিকে কেউ ফিরে তাকায়নি। সন্তানেরাও খোঁজখবর নেয়নি –“কেমন আছেন তাদের জন্মদাতা পিতা…??”
দু:খ, কষ্ট, রোগ-শোক আর অভিমানে ঘরহীন অসহায়দের জন্য বরাদ্দকৃত সেই আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরেই মারা গেছেন সাবেক দাপুটে সাংসদ এই জজ মিয়া। তাঁর মৃত্যু আমাদের শিখিয়ে গেল অনেককিছু, দেখিয়ে দিল বাস্তবতা কত নির্মম এবং নিষ্ঠুর হতে পারে।
আল্লাহ্ তা’য়ালা
উনাকে জান্নাতুল ফেরদৌসে জায়গা দিন, -আমীন!!