এ.বি.এম.হাবিব নিজস্ব প্রতিবেদক
নওগাঁ জেলার মহাদেবপুর উপজেলার চেরাগপুর ইউনিয়নের স্বরুপপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ম্যানেজিং কমিটিকে কেন্দ্র করে দুপক্ষের সংঘর্ষে ৪জন আহত হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়,
গত(৭জানুয়ারি) মঙ্গলবার সাড়ে ১০টার সময় স্কুল চলাকালীন সময়ে বিএনপি ও জামাতের এক পক্ষের শাহজাহান, শাকিব, শামীম, আরমান, আরাফাত,রুহুল,ছালামসহ অজ্ঞাত ৫/৬ জন নেতাকর্মীরা প্রধান শিক্ষিকার সুঞ্জিতা রানীর অফিস কক্ষে ঢুকে উত্তেজিত অবস্থায় হুমকি, ধামকি ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করে। এ সময় দাতা সদস্যর জুয়েল ও হাবিবকে আগে থেকে উপস্থিত দেখে তাদেরকে বেদম মারপিট শুরু করে দেয়। তাদেরকে মারতে মারতে অফিস কক্ষ থেকে বের করে সকলে মিলে আবারো এলোপাতাড়ি ভাবে মারপিট করতে শুরু করে। এমন সময় স্থানীয়রা দেখতে পেয়ে এগিয়ে আসলে তাদেরকেও মারধর করে। স্থানীয় এলাবাসী এক হয়ে বিএনপি,জামাতের নেতাকর্মীদের ধাওয়া করলে,তারা সেখান থেকে পালিয়ে যায়। সেখানে মারপিটে আহত হয়েছে রাজু আহমেদ জুয়েল, সাজু, হাবিব ও উৎসব নামের ৪ যুবক। এ খবর নওহাটা পুলিশ ফাঁড়ীতে খবর পৌঁছালে সেখানে পুলিশ উপস্থিত হয়ে পরিবেশ শান্ত করেন।
এ সংঘর্ষের ঘটনায় শাহজাহান,শাকিব, শামীম, আরমান,আরাফাত,রুহুল,ছালামসহ অজ্ঞাত ৫/৬ জন নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ,মারপিট, শিক্ষিকাকে অকত্য ভাষায় গালিগালাজ,হুমকির প্রতিবাদে এবং তাদের শাস্তির দাবী করে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকাবাসীরা বিদ্যালয়ের মাঠে একটি মানববন্ধন করেন।
স্থানীয়রা জানায়,উপজেলার চেরাগপুর ইউনিয়ন কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক মো. শাজাহান ও তার দলবল নিযে় ৫ আগষ্টের পর থেকে এলাকায় নানা ধরনের অত্যাচার অনিয়ম করে আসছে। তারা গত ১ জানুয়ারি ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বই বিতরণে শাহাজানকে দাওয়াত না দেওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে ২ জানুয়ারি বিদ্যালয়ে গিয়ে প্রাধান শিক্ষককে বিভিন্ন অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করে এবং ওই বিদ্যালয়ের জমির দাতা হিসাবে নিজেকে দাবী করে। ওই বিদ্যালয়ের জমির প্রকৃত দাতা আব্দুল রাজ্জাক মাস্টারের স্বজনেরা বিদ্যালয়ে গিয়ে প্রাধান শিক্ষককে তাদের দলিল দেখানোর সময় খবর পেয়ে শাহাজান তার দলবল শাকিব, শামিম, আরাফাত, রহুল, সালাম সহ লাঠিসোটা নিয়ে প্রকৃত দাতার স্বজনদের উপর অফিসের ভেতরে ঢুকে অতর্কিত হামলা চালায়। এবং প্রধান শিক্ষিকাকে চাকুরী থেকে বহিষ্কার করবে বলে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হযে় এলাকাবাসী আজ বিদ্যালয়ের মাঠে মানববন্ধন করেছে।
এবিষয়ে জানতে চাইলে কৃষক দলের চেরাগপুর ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শাহাজান অস্বীকার করে বলে, সে তাদেরকে মারপিট করেনি এবং তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে তা মিথ্যা। তারা তার ভাবীর মাথায় ইট মেরেছে, এ ব্যাপারে থানায় একটি অভিযোগও দিয়েছে বলে জানায়।
এব্যাপারে সহকারি ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শেখ মো. নাজমুল হোসেন বলেন, শাহজাহন ও রুহুল এসে আমাদের মেডামকে অশ্লিল ভাষায় গালিগালাজ করে ও হুমকি দিয়ে বলেন, আপনি মেয়ে মানুষ না হলে এতোক্ষনে আপনাকে পিটিয়ে এখান থেকে সরাইতাম, আপনি মেয়ে মানুষ হয়ে বেঁচে গেলেন। এখনো সময় আছে নিজে থেকেই বদলী নিয়ে সরে পরেন, না হলে আপনার চাকুরি খাবো বলে হুমকি দেয়।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা সঞ্চিতা রানী সরকার বলেন, শাহজাহান তাকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেছে যা ভাষায় প্রকাশযোগ্য নয় এবং তাকে চাকুরিচুত করার হুমকিও দিয়েছে। শাহজান গংয়ের হুকমিতে সে সহ সকল শিক্ষকরা নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রযে়ছে বলে জানায়।
এ বিষয়ে ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ হারুন বলেন, ওই বিদ্যালয়ের প্রাধান শিক্ষিকা নওগাঁ থেকে আসেন।সকালে বিদ্যালয়ে গিয়ে ইউনিয়ন কৃষকদলের সাধারণ সম্পাদক শাহাজান, জামায়াতের কোষাধ্যক্ষ এবং তার আরেক ভাই বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা দাবী করে তারা বিদ্যালয়ে গিয়ে, প্রাধান শিক্ষকের কাছে গিয়ে দাতা সদস্য হিসাবে দাবী করলে প্রধান শিক্ষিকা তাদের দলিল দেখাতে বলেন। এরপর আজ প্রকৃত দাতার ছেলেসহ অন্যরা দলিলসহ সেখানে গেলে অফিসের মধ্যেই তাদের মারপিট করে।
এ বিষয়ে উক্ত ইউ,পি সদস্য মো. সোহরাব হোসেন উজ্জ্বল এর কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, ঘটনার সময় সে সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। উপস্থিতি থাকলে এমন সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতে দিতো। তবে তিনি পরবর্তীতে এসে ঘটনা শুনেছেন বলে জানান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মহাদেবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ হাসমত আলী বলেন, এক পক্ষ অভিযোগ দিয়েছে এবং অন্য পক্ষও অভিযোগ দেওয়ার জন্য এসেছে। এ বিষয়ে তদন্তসাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান।