বিশেষ প্রতিবেদক
চট্টগ্রাম নগরীর সদরঘাট থানা পুলিশের অভিযানে ৩০ টন অবৈধ ইউরিয়া সার, একটি ট্রাক ও একটি কভার্ডভ্যান জব্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় মো. জিন্নাত আলী (৫০) নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, উদ্ধারকৃত সারগুলো অবৈধভাবে সংগ্রহ ও পরিবহন করা হচ্ছিল।
ঘটনার বিবরণ জানা যায়, গত ১০ ডিসেম্বর, ২০২৪, রাত আনুমানিক ২টা ৫ মিনিটে সদরঘাট থানার এসআই মো. মাহবুব আলমের নেতৃত্বে টহল চলাকালে স্ট্র্যান্ড রোডস্থ ডিএসপি ঘাট সংলগ্ন এলাকায় পরিত্যক্ত অবস্থায় একটি ট্রাক (ঢাকা মেট্রো-ড-১৪-৫৫৩৯) এবং একটি কভার্ডভ্যান (চট্ট মেট্রো-শ-১১-২৩৪১) দেখা যায়। আশপাশের লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেও গাড়ির কোনো মালিকানা বা চালকের খোঁজ না পাওয়ায় পুলিশ সন্দেহবশত তল্লাশি চালায়। তল্লাশিতে পাওয়া যায়: ট্রাকে ২০৪ বস্তা ইউরিয়া সার, কভার্ডভ্যানে ৩৯৬ বস্তা ইউরিয়া সার। প্রতিটি বস্তায় ৫০ কেজি করে মোট ৬০০ বস্তা, যার ওজন ৩০,০০০ কেজি।
১১ ডিসেম্বর, মো. জিন্নাত আলী নিজেকে মেসার্স হাজী ফয়েজ এগ্রো ট্রেডিং এর প্রতিনিধি দাবি করে জব্দকৃত সারগুলো তাদের বলে দাবি করেন এবং চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড থেকে সরবরাহকৃত ম্যানুয়াল গেট পাশ উপস্থাপন করেন।
তবে বিষয়টি যাচাই করতে পুলিশ চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেডের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজারের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, বর্তমানে ম্যানুয়াল প্রক্রিয়ায় সার সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।
সকল লেনদেন ও সরবরাহ অনলাইনের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে মো. জিন্নাত আলী ম্যানুয়াল গেট পাশের উৎস সম্পর্কে কোনো সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দিতে ব্যর্থ হন। তার কথায় অসঙ্গতি ধরা পড়লে পুলিশ তাকে আটক করে।
গোপন তদন্তে পুলিশ নিশ্চিত হয় যে— মো. জিন্নাত আলী বিসিআইসির নিবন্ধিত কোনো সার ডিলার নন। মেসার্স হাজী ফয়েজ এগ্রো ট্রেডিং নামক প্রতিষ্ঠানটিও বিসিআইসির অনুমোদিত কোনো ডিলার নয়।
অর্থাৎ, তিনি অবৈধভাবে সার সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও পরিবহন করছিলেন, যা সার ব্যবস্থাপনা আইন, ২০০৬ এর লঙ্ঘন। সদরঘাট থানার পুলিশ মো. জিন্নাত আলীর বিরুদ্ধে সার ব্যবস্থাপনা আইন, ২০০৬ এর ৮(২)/১২(৩) ধারায় মামলা দায়ের করেছে।
গ্রেফতারকৃত আসামি মো. জিন্নাত আলী (৫০), পিতা: মৃত খলিল আহম্মদ,শিকলবাহা, কর্ণফুলী, চট্টগ্রাম।
বর্তমানে সুন্দরবন হোটেল, স্ট্র্যান্ড রোড, সদরঘাট, চট্টগ্রাম।
উদ্ধারকৃত মালামাল হল ৬০০ বস্তা ইউরিয়া সার (মোট ওজন: ৩০,০০০ কেজি), একটি ট্রাক (ঢাকা) মেট্রো- ড-১৪-৫৫৩৯) ,একটি কভার্ডভ্যান (চট্ট মেট্রো- শ-১১-২৩৪১)।
সদরঘাট থানার ওসি বলেন, “চট্টগ্রামে অবৈধ সার সরবরাহ ও চোরাচালান বন্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। কৃষকদের অধিকার রক্ষায় এবং কৃষি খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে অবৈধ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
কৃষি বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, পুলিশের এই অভিযান কালোবাজারি রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এতে কৃষকরা সঠিক দামে বৈধ সার পাবেন এবং কৃষি উৎপাদনে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
চট্টগ্রামে অবৈধ সার ব্যবসা বন্ধে এমন অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে সদরঘাট থানা পুলিশ।