মোহাম্মদ মাসুদ নিজস্ব প্রতিবেদক
কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী পাগলা মসজিদের দানবাক্স/
দানসিন্ধুক যেন টাকার খনি। এবার ৩ মাস ১৩ দিনে পাওয়া গেছে রেকর্ড ৮ কোটি ২১ লাখ ৩৪ হাজার ৩০৪ টাকা। এছাড়াও রয়েছে স্বর্ণালঙ্কার ও বিদেশি মুদ্রা। দানের এসব অর্থ মসজিদের স্থানে আন্তর্জাতিক মানের কমপ্লেক্স বানানোসহ দরিদ্র-অসহায় রোগীদের চিকিৎসার কাজে ব্যয় হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। আলোচিত পাগলা মসজিদের ১২টি দানবাক্স ও একটি লোহার সিন্দুক খুলে এবার ৩০ বস্তা টাকা পাওয়া গেছে। সেখানে ৮ কোটি ২১ লাখ ৩৪ হাজার ৩০৪ টাকা পাওয়া গেছে।
টাকা গননা কাজের সমন্বয়ক রূপালি ব্যাংক কিশোরগঞ্জ প্রধান শাখার সহকারী জেনারেল ম্যানেজার মো. রফিকুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর আগে এতো পরিমান টাকা বস্তা পাওয়া যায়নি। ৩ মাস ১৪ দিন পর শনিবার সকাল ৭টায় এ দানবাক্সগুলো খোলা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক ও পাগলা মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফৌজিয়া খান ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরীর উপস্থিতিতে দানবাক্সগুলো খোলা হয়। এছাড়াও এ সময় বিপুল সংখ্যক সেনাবাহিনী, পুলিশ ও আনসার সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
মসজিদের লোহার দানসিন্ধুক যেন টাকার খনি। খুলতেই দেখা যায় শুধু টাকা আর টাকা। এসব টাকা বস্তায় ভরে নেওয়া হয় ওই মসজিদের দোতলায়। পরে মসজিদের মেঝেতে বসে টাকা গুনেন প্রায় দেড় শ মাদ্রাসা ছাত্র-শিক্ষকসহ ৭০ জন ব্যাংক কর্মকর্তা। তিন থেকে চারমাস পরপরই এমন দৃশ্যের দেখা মিলে কিশোরগঞ্জের এই পাগলা মসজিদে। এবার ৩ মাস ১৩ দিন পর শনিবার সকালে মসজিদের ১০টি দানবাক্স খুলে বের করা হয় ২৯ বস্তা টাকা। এছাড়াও রয়েছে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা, রূপা ও স্বর্ণালঙ্কার।
এমন বিশ্বাস থেকেই দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে সকল ধর্মের মানুষ প্রতিনিয়ত মানতের নগদ অর্থ, স্বর্ণালঙ্কার, বৈদেশিক মুদ্রা, গরু, ছাগল, হাস, মুরগিসহ বিভিন্ন সামগ্রী দান করে থাকেন।
আগে গত ১৭ আগস্ট ৩ মাস ২৭ দিন পর কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের ৯টি দানবাক্স ও একটি ট্রাঙ্ক খুলে ২৮ বস্তা টাকার গণনা শেষে পাওয়া গিয়েছিল ৭ কোটি ২২ লাখ ১৩ হাজার ৪৬ টাকা ও বিপুল পরিমাণ স্বর্ণালংকার ও বৈদেশিক মুদ্রা।
গত ২০ এপ্রিল পাগলা মসজিদের ৯টি দানবাক্সে ৭ কোটি ৭৮ লাখ ৬৭ হাজার ৫৩৭ টাকা পাওয়া গেছে। এছাড়া বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালঙ্কার পাওয়া গেছে। সাড়ে ১৮ ঘণ্টায় ২২০ জনেরও বেশি লোক এ টাকা গণনায় অংশ নেন। এছাড়া বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালঙ্কার পাওয়া গেছে।
গত বছরের ৯ ডিসেম্বর পাগলা মসজিদের ৯টি দানবাক্সে রেকর্ড ৬ কোটি ৩২ লাখ ৫১ হাজার ৪২৩ টাকা পাওয়া গেছে। সাড়ে ১৫ ঘণ্টায় ২২০ জনেরও বেশি লোক এ টাকা গণনায় অংশ নেন। এছাড়া বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালঙ্কার পাওয়া যায়।
জনশ্রুতি রয়েছে, প্রায় আড়াই শ বছর আগে পাগলবেশী এক আধ্যাত্মিক পুরুষ খরস্রোতা নরসুন্দা নদীর মধ্যস্থলে মাদুর পেতে ভেসে এসে বর্তমান মসজিদ এলাকা জেলা শহরের হারুয়ায় থামেন। তাকে ঘিরে সেখানে অনেক ভক্তকুল সমবেত হন। ওই পাগলের মৃত্যুর পর সমাধির পাশে এই মসজিদটি গড়ে ওঠে। পরে কালক্রমে এটি পরিচিতি পায় পাগলা মসজিদ নামে।