নওগাঁ প্রতিনিধি-
নওগাঁ জেলার মহাদেবপুর উপজেলার লওহাটার মোড়ের (চৌমাসিয়া) মোসলেম উদ্দিনের ছেলে শহিদুল ইসলাম হাজার হাজার সাধারণ মানুষের কাছে “অন প্যাসিভ” আইটি কোম্পানির কথা বলে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, শহিদুল ইসলাম গত ২০১৮ সাল থেকে এই “অন প্যাসিভ” অন লাইন ভিত্তিক আইটি কোম্পানির কথা বলে স্থানীয় এলাকাসহ নওগাঁ জেলার বিভিন্ন জায়গায় ১২ হাজার ২ শত টাকার বিনিময়ে সদস্য করে নিচ্ছে। সাধারণ মানুষদের সে বলছে, প্রথম অবস্থায় ১২ হাজার ২শত টাকা দিয়ে এই কোম্পানির সদস্য হলে,আগামী ৫ বছরের মধ্যে এই কোম্পানির ২৫% লোভ্যংশ সকল সদস্যদের মাঝে বিতরণ করা হবে। যা প্রতিটি সদস্য প্রতিমাসে ডলার ভাঙ্গালে বাংলা টাকায় ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা করে পাবেন। সারা পৃথিবীতে এই কোম্পানির সদস্য নেওয়া হচ্ছে। পার্শবর্তী দেশ ভারতেরও প্রচুর সদস্য হয়েছে, প্রতি সপ্তাহে জুম মিটিং চলছে। এমন লোভনীয় প্রলোভনে পড়ে অনেক পরিবারের সকল সদস্যরাও হুমড়ি খেয়ে পড়ছে এ কোম্পানির সদস্য হওয়ার জন্য এবং একেক জন ৩/৪ টা করে সদস্যও হচ্ছে বলে জানা যায়। গোপনীয় তথ্যে জানা যায়, নওগাঁ জেলা জুড়ে প্রায় ৬ থেকে ৮ হাজার সদস্য করেছে এবং কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে শহিদুল ইসলাম।
এ বিষয়ে একাধিক শহিদুল ইসলামের কথা শুনে তার মাধ্যমে সদস্য হয়েছে তারা জানান, এই “অন প্যাসিভ” আইটি কোম্পানির সদস্য করতে শহিদুল ইসলাম অনেক অনেক স্বপ্ন দেখিয়ে তাদেরকে। ১২হাজার ২ শত করে টাকা নিয়ে শহিদুল ইসলাম তাদেরকে সদস্য করেছে। অনেকে গরু,ছাগল,হাঁসমুরগি বিক্রয় করে এবং অনেকে জমি বন্ধক রেখেও তার লোভনীয় অফার শুনে সদস্য হয়েছে। ৫ বছরের মধ্যেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে মোবাইলে ডলার ঢুকতে শুরু করবে কিন্তু ৫ বছর পার হয়ে ৬ বছর চলছে এখনো কেউ কোন ডলারের মুখ দেখেন নাই। তবে শহিদুল ইসলাম আগামী ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি মাস পর্যন্ত সময় নিয়েছে এর মধ্যে অবশ্যই ডলার ঢুকবে বলে গ্যারান্টি দিয়েছে। আর মাত্র ২মাস এ জন্যই সকলে ধৈর্য ধরে আছে বলে তারা জানায়।
এ বিষয় নিয়ে শহিদুল ইসলামের কাছে সরাসরি জানতে চাইলে সে পুরোপুরি অস্বীকার করে সাংবাদিকদের বলে, সে নিজে একাই একটি “অন প্যাসিভ” এর সদস্য হয়েছে। কোনদিন,কখনো কাহকেই,কোন প্রকার সদস্য করে দেয় নাই। এই “অন প্যাসিভ” এর সারা পৃথিবীতে প্রায় সাড়ে ১৪ লক্ষ সদস্য আছে বলে জানায়। এই “অন প্যাসিভ” কোম্পানি আজ থেকে ২বছর আগেই অর্থ্যাৎ ২০২২ সালেই বন্ধ হয়ে গেছে বলে শহিদুল ইসলাম জানায়।
একাধিক সুত্রে জানা যায়, শহিদুলের বক্তব্য নেওয়ার পর বৈকালে স্থানীয় সকল সদস্যদের নিয়ে একটি বৈঠক করেছে সে। সেই বৈঠকে সদস্যদের এমন কিছু বুঝানো হয়েছে,যার জন্য সকল সদস্যরা শুধু ২মাস ধৈর্য্য ধরে, পরে মুখ খুলবে বলে সাংবাদিকদের জানান।
শাহীন আলম নামের ডিসটিনির সাংবাদিক পরিচয়ে ফোন করে জানান, তিনি এই “অন প্যাসিভ” সমন্ধে জানেন এবং বোঝেন। কোম্পানিটি সঠিক আছে বলে তিনি সুপারিশ করেন সাংবাদিকের কাছে। পরবর্তীতে খোঁজ নিয়ে জানা যায় তিনিও এই “অন প্যাসিভ” এর সাথে জড়িত। তার কাছে মোবাইল ফোন ব্যাক করে জানতে চাইলে তিনি জাড়িত আছেন তবে তিনি কোন টাকা নেন না ফ্রিতে সদস্য করে নেন বলে সাংবাদিককে জানান।
স্থানীয় সচেতন মহল জানান, এর আগে এমন বহু ইন্টারনেটের মাধ্যমে কোম্পানির উৎভব ঘটে। কিছু দিন অল্প পরিসরে কিছু টাকাও দেয় এরপর সারা পৃথিবীর সকল সদস্যদের ব্যালেন্সের মোটা অংকের টাকা মেরে দিয়ে পুরো সিস্টেমই বন্ধ করে দেয়। তখন সকলের মাথায় হাত এবং আপসোস করা ছাড়া কিছুই করার থাকে না। এমন এর আগে “রিং আই ডি” নামের একটি কোম্পানি বাংলাদেশে এসেছিল বা ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠে ছিলো। বাংলাদেশে যার উদ্বোধন করেছিলেন দেশের নামী-দামী ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মূর্তুজা। প্রথম অবস্থায় কিছু টাকা গ্রহককে দিয়েও ছিল এই কোম্পানি পরবর্তীতে এই কোম্পানি হাজার হাজার কোটি ডলার নিয়ে সকল সিস্টেম বন্ধ করে পালিয়ে যায়।যেখানে বাংলাদেশী প্রায় কোটি গ্রাহকের মাথায় হাত পড়ে। তখন ক্রিকেটার মাশরাফি বলেছিলেন, তিনি সেলিব্রিটি হিসেবে শুধু উদ্বোধন করেছিলেন এর বেশি তিনি কিছুই জানতেন না। তবে তার ঐ কথাটিও সত্য ছিলো। এরপর কিছু দিন আগে এমটি এফ ই সিও কোম্পানি বাংলাদেশের ছেলে-মেয়েদের কাছে অল্পদিনেই ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। এটির সিও পোষ্টে ছিল কুমিল্লার মাসুদ। এই কোম্পানিও গত বছর বাংলাদেশ থেকে প্রায় সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা নিয়ে উধাও। নওগাঁর সচেতন মহল জানান, হাজার হাজার সাধারণ মানুষ পথে বসার আগেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের মাধ্যমে তদন্ত করা দরকার বলে তারা প্রশাসনের সহযোগিতা আশা করেন।