নিজস্ব প্রতিবেদক:
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে দেশের সর্বস্তরের জনগণের অংশগ্রহণে ফ্যাসিস্ট হাসিনার বিরুদ্ধে একটি সফল গণঅদ্ভুত্থান সংগঠিত হলেও এখনো প্রশাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে রয়ে গেছে স্বৈরাচারের পা চাটা কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা। রাজনৈতিক পরিচয় ২০১৩ সালে নিয়োগ পাওয়া চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার বর্তমান ডেপুটি কিউরেটর ডাক্তার শাহাদাত হোসেন তাদেরই একজন। ২০১৩ সালে এই কর্মকর্তা নিয়োগ পান প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে, যাহা একটি দ্বিতীয় শ্রেণীর পদ। এই পদে থেকে জেলা প্রশাসনের কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার সহায়তায় তিনি প্রথম শ্রেণীর পদ ভেটেরিনারি সার্জন হিসেবে পদোন্নতি নিয়েছেন যাহা চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা বিধি/আইনের পরিপন্থী। পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও যথাযথ পরীক্ষার মাধ্যমে এই পদে নিয়োগের বিধান থাকলেও তিনি পতিত আওয়ামী লীগের কিছু নেতার কল্যাণে ও প্রশাসনের কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার সহায়তায় ভেটেনারি সার্জন হন। এই পদে চাকরিকালীন সময়ে তিনি VIMCO Animel Health নামের একটি ওষুধ কোম্পানির চট্টগ্রাম রিজিওনের সেলস ম্যানেজার হিসেবে ২০২২ সাল পর্যন্ত চাকরিও করতেন। যাহা চিড়িয়াখানার চাকরি বিধি মোতাবেক অপরাধ বলে বিবেচিত।
চিড়িয়াখানায় চাকরি করলেও চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের রাজনীতি কন্ট্রোল ছিল নওফেল ভক্ত শাহাদাত হোসেন শুভর হাতে। চিড়িয়াখানা প্রাংগনকে তিনি ছাত্রলীগের অফিস বানিয়ে ফেলেছিলেন। ভেটেনারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য পদত্যাগী ভিসি ডাক্তার এ এস এম লুৎফল আহসান এর নিয়োগ তার রাজনৈতিক লবিংয়ে হয়েছে বলে গুঞ্জন আছে। এই লবিংয়ে তিনি হাতিয়েছেন বিপুল পরিমাণ অর্থ। ভিসির নিয়োগের পর ভিসি’র পিএস পদে তার বিশ্বস্ত এবং রাজনৈতিক শিষ্যকে নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টায়ও তিনি সফল হন।রাজনৈতিক গুরুদের আশীর্বাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে আর্থিক সুবিধা নিয়ে নিজ বলয়ের লোকদের নিয়োগে ভূমিকা রাখেন আওয়ামী রাজনীতির সাথে জড়িত চিড়িয়াখানার এই কর্মকর্তা।
২০১৩ সালে রাজনৈতিক পরিচয়ে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্তির পর,চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার তৎকালীন ডেপুটি কিউরেটর জনাব মনজুর মোর্শেদ চৌধুরীর অসুস্থতা জনিত অনুপস্থিতির সময় প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সহায়তা নিয়ে তাকে বিতারিত করে নিজেকে চিড়িয়াখানার সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী বানান এই অসাধু ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা। প্রথমেই নিজের আত্মীয়-স্বজনকে অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন পদে নিয়োগ দেয়া শুরু করেন বিজ্ঞাপন ছাড়াই,যাহা পড়ে অত্যন্ত সূচাতুরভাবে প্রশাসনের কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার মাধ্যমে বৈধ করে নেন। তাদের মাধ্যমে প্রথমেই দখল নেন টিকিট বাণিজ্যের। এ কাজে তাকে সহযোগিতা না করায় স্বেচ্ছায় চাকরি ছাড়তে বাধ্য করেন তৎকালীন হিসাব রক্ষক নজরুল ইসলাম ও স্টোরকিপার আবুল বাশারকে। তার নিজের নিয়োগকৃত কেয়ারটেকার মহিনকে দায়িত্ব দেন হিসেবে রক্ষকের, চিড়িয়াখানার টাকা আত্মসাতে তার সহযোগী হন কেয়ারটেকার কাম হিসাব রক্ষক এই মুহিন। কম্পিউটারাইজড টিকিট থাকা সত্ত্বেও দর্শণার্থীদের ভিড়ের অজুহাতে নিজের লোক দিয়ে ছাপানো টিকিট বিক্রি করে হাতিয়ে নিয়ে নেন বিপুল অংকের টাকা। ২০১৭ সালের টিকেট বিক্রির ফাইল তদন্ত করলেই পাওয়া যাবে জেলা প্রশাসনের অনুমোদনবিহীন টিকেট ছাপানোর তথ্য। টিকেট ছাপাতে হলে জেলা প্রশাসকের অনুমোদন নিয়ে কার্যাদেশ দেয়ার নিয়ম থাকলেও তিনি অনুমোদনবিহীন টিকেট ছাপিয়ে ওই সময় বিক্রি করতেন।
চিড়িয়াখানার বিধি মোতাবেক উন্নয়ন কাজের ব্যয় ০১ লক্ষ টাকার বেশি হলে পত্রিকায় বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে দরপত্র আহবান করার নিয়ম থাকলেও কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার সহায়তায় করোনাকালীন সময়ে প্রায় ০৭ কোটি ৭৪ লক্ষ টাকার কাজ দেখিয়েছেন কোনরকম টেন্ডার ছাড়াই , যা সম্পন্ন করেছেন তারই বাল্যবন্ধু লিটু নামের এক ব্যবসায়ী। এসব কাজে সে সময় তাকে সহযোগিতায় এগিয়ে আসেন তারই নিয়োগকৃত মহিন, আতিক, জসিম, লিটন এবং ড্রাইভার রাজু। ধীরে ধীরে এসব সহযোগিদের মাধ্যমেই ডাক্তার শাহাদাত হোসেন গড়ে তোলেন দুর্নীতির সাম্রাজ্য।
এখনো শেষ করতে পারিনি ডাক্তার শাহাদাত হোসেন শুভর অনিয়ম ও দুর্নীতির কাহিনী। চিড়িয়াখানার এমন কোন বিষয় নেই যেখানে তার দুর্নীতির ছাপ নেই। পশু খাদ্য ক্রয়, পশুদের ঘর নির্মাণ, চিড়িয়াখানার গাছ কেটে বিক্রি করা সহ যত খাত আছে সব জায়গা থেকেই তিনি টাকা নিয়ে থাকেন। সিটি কর্পোরেশন করে দেওয়া পাবলিক টয়লেটও বাঁচতে পারেনি তার দুর্নীতির থাবা থাকে। বৈধ ইজারাদারকে হটিয়ে সেখানেও তিনি বসিয়েছেন নিজের লোক।চিড়িয়াখানার ক্রয় বিক্রয়ের প্রতিটি খাতে নিজের লোক লাগিয়ে একটা অংশ নিজে আত্মসাৎ করেন ডাক্তার শাহাদাত হোসেন শুভ। ক্রয় বিক্রয়ের রশিদ গুলি পর্যালোচনা করলে প্রকৃত সত্য উদযাটিত হয়ে আসবে। তার পালিত মহিন এবং জসিমকে আইনের আওতায় আনলেই বেরিয়ে আসবে তার দুর্নীতির সকল হিসাব।
চিড়িয়াখানার উন্নয়নে একটি পরিচালনা কমিটি থাকলেও এই কর্মকর্তার স্বৈরাচারী মনোভাবের কারণে তা আজ বিলুপ্তপ্রায়। উন্নয়ন ব্যয় থেকে অর্থ আত্মসাৎ করার সুযোগের জন্যই তিনি অকার্যকর করে দিয়েছেন এই কমিটি। চিড়িয়াখানার নিম্ন শ্রেণীর কর্মচারীদের চাকরির অবসরের পর তাদের সন্তানদের চাকরি দেয়ার নামেও এই কর্মকর্তা করেছেন দুর্নীতি। যারা তাকে আর্থিক সুবিধা দিয়েছেন তাদের নিয়োগ দিয়েছেন ঘুষখোর ডাক্তার শাহাদাত হোসেন। বৈষম্যের শিকার হয়েছেন হতদরিদ্র অনেক কর্মচারীর সন্তানরা।
আওয়ামী লীগ নেতা এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী, মহিবুল ইসলাম নওফেলসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতাদের ছত্রছায়ায় স্বৈরাচারী মনোভাবের এই দুর্নীতিগ্রস্ত ডাক্তার শাহাদাত হোসেন অল্প সময়ে বিপুল অর্থের মালিক হয়েছেন লেক ভিউ আবাসিক এলাকায় করেছেন তিন তলা বাড়ি। কিনেছেন নামে বেনামে অনেক সম্পত্তি। ফেসবুক পিন পোস্টে নিজেকে দরিদ্র পরিবারের সন্তান এবং পারিবারিক ব্যবসা হিসেবে মুদি দোকান উল্লেখ করা এই কর্মকর্তা কিভাবে এত অল্প সময়ে এত সম্পদের মালিক হলেন তা তদন্তের দাবি রাখে। উল্লেখ্য ২০১৩ সালে মাত্র ৭ হাজার টাকা বেতনের চাকরিতে প্রবেশ করেন এই কর্মকর্তা। ইতিপূর্বে তার দুর্নীতির খবর বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হলেও আওয়ামী লীগ সরকারের প্রভাব খাটিয়ে বেঁচে যান এই দুর্নীতিবাজ।
কালি শেষ হয়ে যাচ্ছে আর লিখতে ইচ্ছে করতেছে না। কত দুর্নীতি করতে পারে একটা মানুষ। চিড়িয়াখানার খাস জমি উদ্ধারের নামে ভেঙেছেন মানুষের বৈধ স্থাপনা। টাকা দাবি করে না পাওয়ায় মানুষের ক্রয় কৃত বৈধ জায়গাতেও সীমান প্রচীর নির্মান করেন চিড়িয়াখানার টাকায়, যার কারণে ভুক্তভোগীরা মামলা করেছেন দুটি যাতে জেলা প্রশাসকও বিবাদী।
সরকারের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলছি, ফ্যাসিস্ট ও স্বৈরাচারের দোসর এই সকল দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এখনই আইনি ব্যবস্থা না নিলে বিফলে যাবে ২৪ এর আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য। ২৪ এর আন্দোলন ছিল দুর্নীতি ও পেশি শক্তির বিরুদ্ধে কথা বলার স্বাধীনতার জন্য। তাই ডাক্তার শাহাদাত হোসেন শুভ ও তার সিন্ডিকেটের মহিন, আতিক, জসিম, লিটন, রাজুসহ সকলের বিরুদ্ধে আনীত এই সকল অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত হোক। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক ডাক্তার শাহাদাত হোসেন শুভ সহ সকল দুর্নীতিবাজদের। সমাজ থেকে নির্মূল হোক দুর্নীতি ও পেশী শক্তির ব্যবহার।