চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব অন্তর্বতী ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় অভিমত
এম এ নাঈম সময়ের পথ
ড. ইউনুসকে শেখ হাসিনার সরকার যেভাবে
নিপীড়ন করেছে তা বিশ্ব ইতিহাসে নজিরবিহীন
=============================
চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব অন্তর্বতী ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা ৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রি. সোমবার সন্ধ্যায় নগরীর জামালখানস্থ একটি রেস্তোঁরায় অনুষ্ঠিত হয়। চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব অন্তর্বতী ব্যবস্থাপনা কমিটির আহ্বায়ক, ওয়ার্ল্ড এসোসিয়েশন অব প্রেস কাউন্সিলস নির্বাহী পরিষদ ও বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের সাবেক সদস্য মইনুদ্দীন কাদেরী শওকত এর সভাপতিত্বে ও অন্তর্বর্তী ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব ব্যবস্থাপনা কমিটির সাবেক বিভাগীয় সম্পাদক গোলাম মাওলা মুরাদের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন আমিনুল ইসলাম, আবু সুফিয়ান, আরিয়ান লেলিন, শিব্বির আহমদ ওসমান প্রমুখ।
সভায় বলা হয়, নোবেল বিজয়ী বাংলাদেশের গর্ব, সারা বিশ্বব্যাপী সম্মানিত ব্যক্তি অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুসকে শেখ হাসিনার সরকার যে নিপীড়ন করেছে তা বিশ্ব ইতিহাসে নজিরবিহীন। পৃথিবীর কোন দেশের সরকার তাদের দেশের নোবেল বিজয়ীকে ভিন্ন মতের কারণে এ ধরণের নিপীড়ন করেননি। সংবিধানের অনুচ্ছেদ: যথাক্রমে ৩১, ৪৪ ও ৯৪ (৪) অনুসারে আইনের আশ্রয় লাভের, হাইকোর্টে বিচারপ্রার্থী হবার অধিকার এবং বিচারকগণ বিচার কার্য পরিচালনায় স্বাধীন বলা হলেও শেখ হাসিনার শাসনামলে এই অধিকারগুলো একটিও রাষ্ট্রের মালিক, জনগণ এবং সংশ্লিষ্টরা ভোগ করতে পারেননি। বরং ড. ইউনুস সহ বিভিন্ন জনের বিরুদ্ধে সাজানো মামলা দিয়ে হয়রান করে শেখ হাসিনার সরকার আক্রোশ চরিতার্থ করেছে।
সভায় বলা হয়, আমাদের দেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ: ২৫ (গ) অনুসারে বিশ্বের যে কোন দেশের নিপীড়িত জনগণের সংগ্রামে পাশে থাকার, সমর্থন করার অঙ্গীকার থাকলেও নোবেল বিজয়ীসহ বিশ্বের শতাধিক ব্যক্তি ড. মুহাম্মদ ইউনুসকে নিপীড়ন না করার জন্য শেখ হাসিনার প্রতি খোলা চিঠি দিলে আমাদের দেশের ৫০ জন সম্পাদক ঐ বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিদের খোলা চিঠি সমর্থন না করে উল্টো প্রতিবাদ করে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে শেখ হাসিনার নিপীড়নের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল, উস্কে দিয়েছিল।
শেখ হাসিনার বন্দনাকারী ঐ সম্পাদকরা এখন বোল পাল্টিয়ে, রঙ বদলিয়ে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের আপনজনের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে অপচেষ্টা চালিয়ে বিভ্রান্তির পাঁয়তারা করছে। সভায় এদের সম্পর্কে সতর্ক থাকার জন্য সংশ্লিষ্টদের আহ্বান জানান।
সভায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলা হয়, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের স্থায়ী সদস্য, সম্পাদক-সাংবাদিক ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শরিকদের তীব্র দাবির প্রেক্ষিতে গত ৬ আগস্ট চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব অন্তর্বর্তী ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠনের পর সদ্য বিলুপ্ত কমিটি ক্লাবে তালা মেরে চাবি নিয়ে গিয়ে ক্লাব কার্যক্রমে বিঘœ সৃষ্টি করে রেখেছে, সদস্যদের কষ্ট দিয়ে আসছে, ক্লাবের নিযুক্ত কর্মচারিদের বেতন দিচ্ছে না। বিলুপ্ত কমিটির কর্মকর্তাদের আর সময় ক্ষেপণ না করে অবিলম্বে অন্তর্বর্তী ব্যবস্থাপনা কমিটির কাছে সুন্দরভাবে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়ার জন্য সভায় আহ্বান জানানো হয়।
সভায় সিদ্ধান্ত হয় যে, অন্তর্বর্তী কমিটি পূর্ণ দায়িত্ব গ্রহণের পর চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের কর্মকা- সংস্কারের জন্য ৬টি পদক্ষেপ জরুরি ভিত্তিতে গ্রহণ করা হবে। পদক্ষেপগুলো হলো- ১. চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবকে সদস্যদের কল্যাণে ও জনসেবায় উন্নত এবং কর্মক্ষম করা, ২. চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের অপ্রয়োজনীয় ব্যয় বন্ধ করা, ৩ প্রেসক্লাবে কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের দায়িত্ব এবং কর্তব্য পালনে উদাসিনতা ও অবহেলা প্রতিরোধ করা, ৪. প্রেসক্লাব সদস্য ও পেশাদার সাংবাদিকদের স্বার্থ সংরক্ষণ করা, ৫. জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের সাথে সমন্বয় সাধন করে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের অধিকতর উন্নয়ন এবং সদস্যদের উপযোগী সুযোগ-সুবিধা, স্থানের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ, ৬. প্রেসক্লাবকে সম্পূর্ণভাবে দুর্নীতিমুক্ত করা এবং সকল সদস্যের জন্য বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল প্রণীত আচরণবিধি অনুসরণ ও প্রতিপালন বাধ্যতামূলক করা।
সভায় দুঃখ প্রকাশ করে বলা হয়, সংবিধান মেনে চলার শপথ নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেয়ে শেখ হাসিনাসহ অতীতে অনেকেই সংবিধান এবং সংবিধানে দেয়া বিধিনিষেধ লংঘন করেছে। সংবিধান লংঘন করলে শাস্তির বিধান কি হবে তা স্পষ্ট নয়। দন্ডবিধির ধারা: ৫৩ অনুসারে শাস্তি হবে? না সাংবিধানিক আদালত গঠন করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সভায় সাংবিধানিক আদালত গঠনকে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কারের পদক্ষেপের অন্যতম বিষয় হিসেবে অন্তর্ভুক্তির জন্য সুপারিশ করা হয়।
অন্তর্বর্তী কমিটি পূর্ণ দায়িত্ব নেয়ার পর স্থায়ী সদস্য, আজীবন সদস্য, সহযোগী সদস্য, সম্পাদক, সাংবাদিকসহ সর্বস্তরের প্রতিনিধিত্বশীল ব্যক্তিদের নিয়ে প্রেসক্লাবের উন্নয়ন তরান্বিত করতে ‘চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব সহায়ক কমিটি’ গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।