কে এম শাহীন রেজা, কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি ॥
‘ব্যাবসা করলেও দোষ-না করলেও দোষ’ এ জন্যই আমি মাদক ব্যবসা করছি, কথাগুলো পোল্লাদ দাস তার মুঠোফোনে অবলীলায় বলে ফেলনেন প্রতিবেদকেরর কাছে। এই পোল্লাদ দীর্ঘ ৭ বছর ধরে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার আলামপুর ইউনিয়নের আলামপুর বাজারের পূর্ব পাশে দাস পাড়ার বাসিন্দা। তার নিজ বাড়ীতেই গড়ে তুলেছেন মাদকের স্বর্গরাজ্য। কুষ্টিয়ার শহর যেমনটি মাদকের জোয়ারে ভাসছে, ঠিক তেমনি ভাসছে অঁজপাড়া গাঁ কুষ্টিয়ার সদর উপজেলার আলামপুর দাসপাড়া ও বালিয়াপাড়া পশু হাট। আর এই মাদকের যোগান দিচ্ছে মাদক সম্রাট পোল্লাদ। গত এক বছর ধরে বীরদর্পে ইয়াবা, গাজা ও ফেনসিডিলের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। পোল্লাদ দাস একাধিকবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ইয়াবা সহ ধরা পড়লেও আইনের বেড়াজাল দিয়ে বেরিয়ে এসেই শুরু করে তার অবৈধ ব্যবসা। ইতিপূর্বে তার বিরুদ্ধে একাধিকবার পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল। অপরদিকে এলাকাবাসী তার বিরুদ্ধে ২০১৭ সালে কুষ্টিয়ার বিভিন্ন দপ্তরে গণপিটিশন দায়ের করেছিল। অবশেষে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আকতারুজ্জামানের সহযোগিতায় কুষ্টিয়া মডেল থানায় উপস্থিত হয়ে তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে ওয়াদাবদ্ধ হয়ে ব্যবসা করবে না বলে কান ধরে উঠবস করেছিল। ওয়াদা করে এসেই পুনরায় শুরু করেছিল মাদকের ব্যবসা। তার কয়েকদিন পরেই ঝিনাইদহ র্যাবের হাতে ৪৭০ পিস ইয়াবা সহ আটক হয়েছিল। তারপর জেল থেকে বেরিয়ে প্রায় ছয় মাস ব্যবসা বন্ধ রেখে বর্তমান স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহযোগীতায় আবারো ইয়াবা, ফেনসিডিল ও গাঁজার বাজার বসিয়েছে দাসপাড়া ও বালিয়াপাড়া পশু হাটের মধ্যে।
এলাকার সূশীল সমাজের ব্যক্তিরা জানান, পোল্লাদ দাস শুধু আলামপুরেই ব্যবসা করছে না, পার্শ্ববর্তী বালিয়াপাড়া, রাতুলপাড়া, ভবানীপুর, দহকুলা, ভাদালিয়া, স্বস্তিপুর, কুড়ীপাড়ায় ফোনের মাধ্যমে ভ্রাম্যমান হিসাবে তার সহযোগীদের দিয়ে মাদক সেবীদের কাছে মাদক পৌঁছে দিচ্ছে। তার ব্যবসা শুধু গ্রামের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। কুষ্টিয়া শহরের মাদক সেবীরাও চলে যাচ্ছে তার কাছে মাদক কিনতে। তারা আরো জানায়, তার মাদকের হট স্পট এখন বালিয়াপাড়া পশু হাট। বিকেল থেকেই পশু হাটের মধ্যে বিভিন্ন ব্রান্ডের নামি দামি মোটরসাইকেল প্রাইভেট কার নিয়ে শহর থেকে মাদক সেবীরা এসে উক্ত পশু হাটের মধ্যে সেবন করে।
তার পার্শ্ববর্তী বাসিন্দারা জানায়, গত এক বছরে সে অবৈধ ব্যবসা করে ইতিমধ্যে লক্ষ লক্ষ টাকার মালিক বনে গেছেন। ক্রয় করছে একটি পর একটি জমি। অপর দিকে নিঃস্ব হচ্ছে স্থানীয় অভিভাবকরা। স্থানীয় অভিভাবকরা একদিকে সন্তানদেরকে নিয়ে দুশ্চিন্তার মধ্যে পড়েছে, অন্যদিকে তারা আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। পোল্লাদের মাদকের ভয়াল থাবায় গ্রাস করেছে উল্লেখিত গ্রামের উঠতি বয়সী যুবকেরা, ফলে বিপথগামী হয়ে পড়ছে তারা।
এ বিষয়ে বালিয়াপাড়া গ্রামের একজন মাদকসেবী জানায়, হাত বাড়ালেই পোল্লাদের কাছ থেকে ইয়াবা, ফেনসিডিল ও গাঁজা পাওয়া যায় অনাসেই। তবে গাঁজা ও ইয়াবা সবসময়ই পাওয়া যায়। ঐ মাদক সেবী এটাও বলেন, পোল্লাদ ব্যবসা করছে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের মদদে ও আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগীতায়। তবে তার বিরুদ্ধে ধর্ষন, হত্যা ও মাদকের মোট ৫/৬টি মামলা চলমান আছে কুষ্টিয়ার আদালতে। স্থানীয় বাসিন্দারা আবারো সোচ্চার হয়ে উঠেছেন পোল্লাদের বিরুদ্ধে, তারা বলেন আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি তার বিরুদ্ধে কোন আইনগত ব্যবস্থা না করে তাহলে আমরাই ব্যবস্থা নিব।
তবে এ বিষয়ে স্থানীয় আলামপুর পুলিশ ক্যাম্প ইনচার্জ এস আই ফিরোজের মুঠোফোনে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমি জানি কিন্তু তাকে আমরা মাদকসহ হাতে নাতে ধরতে পারছি না, হাতে নাতে না ধরতে পারলেতো কোন লাভ হবে না। ক্যাম্প ইনচার্জের কথা স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিদেরকে জানালে তারার বলেন, এখানেতো ক্যাম্প ইনচার্জ অবুঝ বাচ্চা শিশুর মত মন্তব্য করেছেন, তারা ইচ্ছে করলে যখন তখন তাকে ধরতে পারে কিন্তু তিনি ধরবেন না কারন তার কাছ থেকে নিয়মিত মাশোহারা নিয়ে ব্যবসা করার পথ পরিস্কার করে দিয়েছে। তারা এটাও বলেন, ইতিপূর্বে র্যাব এসে তাকে মাদক বাদেই ধরেছিল, কিন্তু পাছার উপর যখন দুঘা দিল সাথে সাথে ৫৭০ পিচ বের করে দিল আমরাতো নিজে চোখে দেখেছি।